হে মহাসাগর
বিষয় : কবিতা
লেখক : মো. মুজাহিদুল ইসলাম
প্রচ্ছদ : মনিরুল মনির
সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৪
ভাষা : বাংলা
আইএসবিএন : ৯৭৮-৯৮৪-৯২৯০১-৮-৬
চার্লস ডিকেন্স তাঁর 'এ টেল অব টু সিটিস' উপন্যাসে লিখেছিলেন, 'ইট ওয়াজ দ্য বেস্ট অব টাইমস, ইট ওয়াজ দ্য ওয়াস্ট অব টাইম। ইট ওয়াজ দ্য এজ অব উইজডম, ইট ওয়াজ দ্য এজ অব ফুলিশনেস।' উনিশ শ একাত্তর যেন আমাদের সেই এক সময়! আমাদের আনন্দের এবং বেদনার, অর্জনের এবং হারানোর।
তারপরও একাত্তর বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়েই বাঙালি অর্জন করে তার প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র। আর সে জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার শ্রেষ্ঠ সন্তান ইতিহাসের রাখাল রাজা, রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী, আপোষহীন, দূরদর্শি ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণে।
হ্যামিলনের বংশিবাদকের ন্যায় তিনি এক অপার ও অবিচ্ছিন্ন টানে ও উদ্দীপনায় পুরো জাতিকে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ঘরমুখী, নির্বিরোধী বাঙালিকে অস্ত্র ধরতে, যুদ্ধে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অসম যুদ্ধ এবং একটি প্রকৃত জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই মহামানবকে হত্যা করা হয় সপরিবারে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে প্রতিবিপ্লবী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যারা স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে আবার পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। তারা জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করেছিল এ রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শকে। একটি মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্নকে। ফলে তারা সবকিছু থেকে, ইতিহাসের পাতা থেকে, রাষ্ট্রের সকল স্তর থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টা অব্যাহত ছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। ফলে এই সময়ের মধ্যে বেড়ে ওঠা এ দেশের সন্তানরা তাদের গৌরবের কথা, জাতির অর্জনের কথা আর এই অর্জনের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘদিন এদেশে জাতির জনকের নামও উচ্চারণ করতে দেওয়া হয়নি। বাজাতে দেওয়া হয়নি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
মানুষ তো একেকটি প্রকৃত স্বাধীন সত্তা। তাকে জিয়ৎকালের জন্য দমিয়ে রাখা যায়। ধ্বংস করা যায় না। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে খোদাই করা নাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর মহিমার কথা দাবিয়ে রাখা যায়নি। মানুষ একদিন সকল অর্গল ভেঙে সম্মিলিত উচ্চারণ করে জাতির জনকের নাম। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন দেশের কবিরা। ১৯৭৬ সালেই কবি নির্মলেন্দু গুণ রচনা করেন তাঁর অমর কবিতা 'আমি শেখ মুজিবের কথা বলতে এসেছি।'
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর মৃত্যুর আগেও কবিতা রচিত হয়েছে। আর মৃত্যুর পর তো লেখা হয়েছে অজস্র, অসংখ্য গান, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস। বাংলা ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান ও কবিতাগুলো এক অসামান্য রচনা। ভাষার অন্যতম সেরা কবিতাগুলো জাতির জনককে নিয়ে লেখা।
একটি কথা আমার স্বীকার করতে হবে যে, ১৯৭৫ পরবর্তী এদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণে এবং তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও ভালোবাসা প্রদানে সমুজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে দেশের অধিকাংশ কবি। আর যে কবিতা কণ্ঠে ধারণ করে সাবলীল ও বলিষ্ঠ আবৃত্তির মাধ্যমে এক সুমহান দায়িত্ব পালন করেছে দেশের আবৃত্তি শিল্পীরা। অন্তত এক্ষেত্রে দেশের আবৃত্তিশিল্পীরা জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে। জাতির জনকের প্রতি সামান্য হলেও দায়বোধের চেষ্টা করেছে। একজন জাতীয়তাবাদী নেতাকে নিয়ে বিশ্বের কোথাও এত কবিতা লেখা হয়েছে এবং এত আবৃত্তি হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।
তরুণ আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক মুজাহিদুল ইসলাম কবিতা ও আবৃত্তির সাথে তার এক যুগের পথচলার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে রচিত বিভিন্ন কবিদের কবিতাগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত মঞ্চে সাবলীলভাবে উপস্থাপন যোগ্য বা আবৃত্তিযোগ্য কিছু কবিতাকে একত্রিত করে এই গ্রন্থটি সাজিয়েছেন। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস কবিতা উৎসব ২০১৭ উপলক্ষে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা তরুণ প্রজন্মের আবৃত্তিশিল্পীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই বইটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
....
কামরুল হাসান বাদল