সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী
১৯৪৭ সনের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের কয়েকদিন পরেই ১৯৭০ সনের ১৫ মে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সনের ১ জুলাই অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেন। ২০০৯ সনের ১৭ মার্চ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে আরো দুই মেয়াদে উপাচার্যের পদে নিয়োগ পান।
১৯৭৩ সনে উচ্চ শিক্ষার্থে জার্মানি গমন করেন। ভারত উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের মাস্টার ডিগ্রি জার্মানিতে স্বীকৃত নয়। তাই এ সকল দেশের মাস্টার ডিগ্রিধারীদের ৭-৮ বছর পড়াশোনা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। কিন্তু সরোজ হাজারী বালিন টেকনিক্যাল ইউনিভাসিটিতে বিশেষ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং তার ফলাফলের ভিত্তিতে সরাসরি ডক্টরেট কোর্সে ভর্তি হন। আড়াই বৎসরে 'খুব ভালো' ক্যাটাগরিতে (১ম শ্রেণির তুল্য) ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
জার্মানি হতে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণাকর্মে নিয়োজিত হন। অনেক M.Sc. M.Phil & Ph.D ছাত্রদের গবেষণা ততাবধান করেন।
পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের Exeter Universityতে এক বৎসর। জাপানের Tokyo Institute of Technology তে ছয় মাস, জার্নাদির Hamburg Universityতে তিনবার ও জার্মানির Friedrich-Schiller University, Jena তে একবার গোল্ট ডক্টরেল গবেষণা করেন। গবেষণা কর্ম ছাড়াও পুস্তক রচনায় তিনি অবদান রেখেছেন। তিনিই প্রথমে বাংলা ভাষায় উচ্চস্তরে সাফল্যজনকভাবে অনেক পুস্তক রচনা করেন। পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পুস্তক রচনা করেন।
১৯৮২ হতে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিন বৎসর তিনি রসায়ন বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষক থাকাকালীন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জার্মান ভাষা শিক্ষক ছিলেন। দেশ ভ্রমণ তার শখ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, সুইডেনসহ প্রায় ৩০টি দেশে ভ্রমণ করেছেন।
।।।
২৫ বছরের সাদাসিদে এক যুবক হঠাৎ জার্মান সরকারের এক বৃত্তি পেলো। তাকে দুয়েকদিনের মধ্যে জার্মানি যেতে হবে। সে এর আগে বিদেশে দূরের কথা দেশের কোথাও বেড়াতে যায়নি, নিজ জেলা চট্টগ্রামের বাইরে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে গেছে; তাও শুধু পড়াশুনার জন্য
তবুও সে জার্মানি পৌছলো; কিন্তু তারপরেই বিপদ। কথা ছিল ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে তার সাথে একজন দেখা করবে। তিনিই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, কিন্তু সেখানে কেউ আসেননি এদিকে যুবক জার্মান ভাষা জানে না, সেখানে ইংরেজি চলে না। তার হাতে টাকা নেই, সে জানে না কোথায় যাবে, বা কীভাবে যাবে? সমস্ত পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনদিন উদ্ত্তান্ত অবস্থার পরে তার স্থান হলো এক জার্মান ভাষা ইনস্টিটিউটে ভাষা কোর্স শেষ করার পরে স্থান হলো এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, যার সাথে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক নেই। এদিকে যুবকের ইচ্ছা ডক্টরেট ডিগ্রি করবে। তাই সে এ স্থানের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ চাইলো। কিন্তু বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থা তাকে জানালো যে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মাস্টার ডিগ্রি জার্মানিতে স্বীকৃত নয়। একারণে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য তাকে অন্তত: ৭-৮ বছর পড়াশোনা করতে হবে। এতদিন বৃত্তি দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারপরেও এ যুবক সরাসরি পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হল, আড়াই বৎসরের মধ্যে 'খুব ভালো' ক্যাটাগরিতে (১ম শ্রেণীর তুল্য) ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলো।
পরবর্তীকালে DAAD জার্মানির আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার জন্য তিনবার এবং অন্য আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার তাকে পোস্ট ডক্টরেল স্কলারশিপ প্রদান করে। এ অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো কীভাবে এ বইয়ে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
সে সাথে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে জার্মানির অবিশ্বাস্য প্রগতির ইতিহাস। লেখকের কিছু অনুভূতিও এসাথে যোগ হয়েছে।
২০২৪