জাহির মুনমুন
চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার সাধনপুর গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। মা শিরীন আক্তার চৌধুরী, বাবা মোঃ আবু জাহের চৌধুরী।
বাবার কর্মস্থলের সুবাদে সিলেট সুবিদ বাজার পিটিআই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে সম্মানসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে পূর্ণ বৃত্তি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। সম্মান শ্রেণিতে থাকাকালীন সময়ে পারিবারিকভাবে বিবাহিত জীবন শুরু হলেও তিনি সংসার এবং পড়াশোনা একসাথে চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনা শেষ করেই চট্টগ্রাম আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ দিয়ে কর্মজীবন এর সূচনা করেন। ২০০৪ সাল থেকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে নতুনভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে কর্মকালীন সময়ে ২০১৬ সালে তিনি হেমরজিক স্ট্রোকের শিকার হন। স্ট্রোক রিকভারি পরবর্তী সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বদান্যতায় কর্মজীবনে পুনর্বহাল হোন।
এটি তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দিগন্তে রক্তকমল। এই বইয়ের কবিতাগুলো মূলত তাঁর অসুস্থতা পরবর্তী সময়ে রচিত। লেখালিখিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ স্কুল দেয়ালিকায় লিখার মাধ্যমে। দৈনিক আজানীতে প্রকাশিত হয় বেশ কিছু কবিতা। যা সংকলিত হয়ে প্রথম কবিতার বই নিয়ত অনুভবে প্রকাশিত হয়।
তবে তিনি পিতামহ আলহাজ্ব জালাল আহমেদ চৌধুরীর অপত্য স্নেহ ও পিতার মাতামহ রম্য লেখক, সমাজহিতৈষী অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদের নিকটবর্তী হবার সৌভাগ্য শিশুকালেই লেখালিখি ও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।
..
"পুরাতত্ত্ব বলে, ভালবাসার স্বত্ব নিরানব্বই ভাগই তার নিজের। সেই আদি থেকে পৃথিবীর শেষ লগ্ন পর্যন্ত সমস্ত আমাদের জন্য কেবলই একভাগ ভালবাস।'
ভালবাসা- মূলত সৃষ্টির শেকড়-মৃত্তিকা। বিশ্বে যা কিছু সচল সক্রিয় তাই-ই অনুরাগ- আবর্তিত। বিশ্বাসে নিয়েই বলা যায়, অংশ জমায় যদিও একভাগ তাও বা কম কীসে! ওইটুকুন দিয়েই তো আজও সৃষ্টির উম্মাদনা দিকে দিকে। তাতে ভর দিয়ে কবি জাহির মুনমুন ও সিক্ত হবেন- এ অনাশ্চর্য বিষয়। আত্মোপলব্ধির ভিত্তিতে জীবন ও সমাজের সহস্রধারা পরিবর্তন, সুন্দর-শুভ-কল্যাণের আকুতিতে তার কাব্যচর্চা। এতে ছন্দ-উপমালোকে কখনও বিম্বিত হয়েছে সমর্পিত বিষণ্ণতা-হাহাকার, কখনও অম্ল-মধুর স্মৃতিতর্পণ, কখনও বা আত্মবিশ্বাসী নতুন সূর্যোদয়ের হাতছানি। নষ্টালজিয়ার ছাপও সুস্পষ্ট।
কবি ভালবাসার অদৃশ্য সিম্পনিতে ভাবনার বিস্তৃতিকে শব্দের তরিতে চড়িয়ে লুই আর-এর 'শব্দই কবিতার জয়শ্রী'-র পক্ষ নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন কাব্যপাথার। যাত্রাপথে রেখে গেছেন অসংখ্য গল্পের দ্যুতিময় পক্তিমালা- যা কিনা কবি সমর সেনের সিদ্ধান্ত বুদ্ধি ও আবেগের সমন্বয়।
আধুনিক মননশীলতার কবি জাহির মুনমুন অসুস্থতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যখন পাঠক সমীপে প্রশ্নাকারে তুলে ধরেন। নিজের অনুভূতি-কল্পনা জারিত অনায়াস স্মৃতিকথন, স্বপ্নছবি- তখন তা আমলে নিতেই হয়।
"তখন সত্যি মানুষ ছিলাম।/ এখন কী আর মানুষ আছি?/অনুভূতির দরজায় খিল লাগিয়ে মানুষের খোলস হয়ে বাঁচি।/ওই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা / মেহগনির মতন করে পত্র- পল্লবে ছেয়ে থাকি।'
সত্যিই, তার কাব্যমাঠে প্রতিভাত সমকালীন বৈরী পরিবেশচিত্র ও নির্বিকার নপুংশক মানবতা। এমন স্খলিত সময়ে সতর্কবাণীই উচ্চারণ করেছেন যেন কবি জাহির। মুনমুন- মানবমনে গজিয়ে উঠছে নিষ্ঠুর স্বার্থবাজ। তাই তাকে আমাদের স্বপ্ন জাগানিয়া, আশার অভিযাত্রী আর চেতনার কবি বলা যায়।
.
আবুল কালাম বেলাল
২০ আগস্ট ২০২৩