শিল্প মাতালের ধন
বিষয় : কবিতা
লেখক : ফাউজুল কবির
প্রকাশক : খড়িমাটি
প্রচ্ছদ : মার্কিন ব্রোঞ্জ শিল্পী ববি কার্লাইলের দ্য সেলফ মেইড ম্যান ভাস্কর্যের অনুকৃতি
প্রথম সংস্করণ : ২০২০
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১২
দেশ : বাংলাদেশ
ভাষা : বাংলা
ISBN : 978-984-8241-40-0
বিশ্বস্ত এবং বিশুদ্ধ কাব্যিক শুভ্র ও পবিত্রবোধ থেকেই আমি ঘোষণা করি-আমি কবি। কবিকে হয়ে উঠতে হয়- রচনা করতে হয় এবং রচিত হতে হয়। হয়ে ওঠার নিরন্তর সাধনাই রচনার বোধ ও আবেশে কবিতাকে কবিসত্তার বিশিষ্ট অস্তিত্বের 'নির্মিতি' দান করে। আমি মনে করি মহৎ কবিতা যিনি নির্মাণ করবেন তার থাকা প্রয়োজন অভিনব ও অবিস্মরণীয় কল্পনাশক্তি ও সূক্ষ্ম বিবেচনা এবং নির্মিতি প্রকৌশল। কবিতা শুধু নির্বাচিত শব্দের বিন্যাসই নয় নির্বাচিত কথন ভঙ্গিতে অবশ্যই নির্বাচিত বোধের রূপায়ণ। কবির কাজ তার বক্তব্য ও সৃষ্টিকে শিল্পময়তায় সচেতন পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রত্যয়ের ভেতরে স্থান করে দেওয়া। আসল কথা জীবনলগ্নতা, সমাজলগ্নতা, প্রকৃতিলগ্নতা, আশ্চর্যবোধলগ্নতা- যা মূলত কবির ধ্যানমগ্নতার মধ্য দিয়ে জারিত হয়ে স্মরণীয় ও অবিস্মরণীয় বাক্যবন্ধের সুষমায় প্রকাশিত হয়, তার নাম কবিতা। কবির মনোমগ্নতা, দর্শনমগ্নতা এবং ধ্যানমগ্নতা পরিশ্রুত হয়ে এমন রহস্যময় বোধের জগৎ বেরিয়ে আসে যা কবিকেও বিস্মিত করে এবং যোগ্যতম অভিজ্ঞ পাঠককেও বিস্ময়াবিভূত করে তোলে। প্রকৃত কবিতা আবেগ যেমন দাবি করে তেমনি মাত্রাতিরেক আবেগ থেকে নিস্কৃতিও চায়। এবং কবিতা ব্যক্তিত্বের অনুভূতির অভিব্যক্তির প্রকাশই নয় শুধু-ভারবাহী ব্যক্তিত্ব থেকে নিজের মুক্তিকেও নিশ্চিত করে। কবি অন্তর্গত অপরিমেয় সত্যকে জানেন। আবার জানেন সৃজনের এ কাজটি সর্বত্র সচেতনে সংঘটিত হয় না। সচেতন ও অসচেতনের এক অসাধারণ সম্মিলনে- সৃজন আরকে ও বিক্রিয়ায় রূপ ধরে রূপ নেয় মহৎ কবিতা। এ কারণেই কবিতা মহৎ কবি এবং শুদ্ধতম মাতালের বিশুদ্ধতম ধন। মনে রাখতে হবে একজন কবির স্নায়ু ও হৃদয়ে গভীরতম ধ্যানমগ্নতায় ও বিষয়লগ্নতায় বাস করেন বিচিত্র অভিনিবেশে মহাজগতের মহাপৃথিবীর অজস্র-সহস্র ধ্যানী কবি। সকলের যোগে অন্তর্গত অন্তর্লীন ধ্যানমগ্ন মাতাল সৃজন প্রতিভায় রচিত হয় শিল্প- যে শিল্প মাতালের ধন-যুগে যুগে কালে মননের দর্শনের জগতে এর অন্যথা নেই, অন্য কোনো নাম নেই- কবিতা ও শিল্প ছাড়া।""
¦¦¦
ফাউজুল কবির
১৬ ডিসেম্বর ২০২০
ফাউজুল কবির :
ফাউজুল কবির মনে করেন এবং বলেন: "কবিতায় জীবন ও জীবন দৃষ্টির আবেগ জটিল ও দারুণ প্রগাঢ় সংহত হয়ে প্রকাশ পেতে পারে। চিত্তকে বিশিষ্ট ও বৈশিষ্ট্যময় করে তুলতে পারে অভাবনীয় প্রকাশ। কিন্তু সেখানে ব্যক্তিজীবনের জটিলতা বা কুয়াশার স্থান নেই। কবি শুধু আবেগই সন্ধান করেন না, সাধারণ আবেগ ও অনুভূতিকে উচ্চস্তরে সৃষ্টিতে নিয়ে যান নিজস্ব মেধাবী প্রকরণ অথবা প্রজ্ঞায় অথবা অতলান্তিক সুন্দরের বেদনায়। আবার আবেগের প্রচণ্ড আক্রান্তি থেকে নিষ্কৃতি ও মহৎ কবির কাম্য।" এ বোধের আশ্রয়েই নির্মিত হয় তার কবিতা। তার কাছে কবিতা জীবনের ভেতরে অনন্য শিল্পজীবন-জীবনের নির্যাস।
ফাউজুল কবির জন্মগ্রহণ করেছেন ০৭ আগস্ট ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। জন্মস্থান চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার উত্তর ইছাখালী গ্রামে। বর্তমান গ্রাম ৭ নম্বর কাটাছরা ইউনিয়নের তেমুহানী। লেখাপড়া করেছেন আবুরহাট উচ্চবিদ্যালয়, ফেনী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) সহ এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ০৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হুলাইন ছালেহ্-নূর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন। সুদীর্ঘকাল সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। সুদীর্ঘকাল বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস এর চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেই নিজেকে সমর্পিত রেখেছেন সারাজীবন।
ফাউজুল কবির তার কবিতাকর্মের জন্য ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সুধীজনদের পক্ষ থেকে তার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে 'রাঙাও প্রাণের পরাণের রঙে' শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ষিত হয়েছেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে কবিতার জন্য পেয়েছেন 'মিরসরাই এসোসিয়েশন সম্মাননা'। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছেন 'মনন সাহিত্য সম্মাননা'। চিন্তা মনন ও সৃজনশীলতায় তিনি এক পৃথক সত্তা অর্জন করেছেন।
ফাউজুল কবির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধখ্যাত চট্টগ্রামের মিরসরাই অঞ্চলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সংবর্ধনা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
কবিতাশিল্পের জন্য তিনি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন- এর 'একুশে সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন।