ক্রুরতার চুম্বক ইশারা
বিষয় : কবিতা
লেখক : সাথী দাশ
প্রচ্ছদ : খালিদ আহসান
সংস্করণ : ২৬ মার্চ ২০১৮
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪৮
ভাষা : বাংলা
আইএসবিএন : ৯৭৮-৯৮৪-৯৩৪২৮-৬-১
দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর সাথী দাশের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলো। দুই দশকের কবিতা থেকে কবিতা নিয়েই গ্রন্থিত কাব্যগ্রন্থ ক্রুরতার চুম্বক ইশারা।
সাথী দাশ ষাট দশকের মধ্যভাগ থেকে রাজনৈতিক পাঠে দীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা-অনুশীলনে সক্রিয় হন। সত্তরের দশকের শুরু থেকেই একনিষ্ঠভাবে চট্টগ্রামের কাব্য ও লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের একজন সৎ ও শুদ্ধতম কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে মিছিলে-আন্দোলনে-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে '৭১ এর মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন। তিনি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দ্রোহী কর্মী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। কবিতায় নারী-প্রেম-নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদির দিকে দৃষ্টিটা না রেখে একান্তভাবে নিজের মতো করে যেমন নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, মার্কসবাদী চিন্তাধারায় সম্পৃক্ততা তাঁর কবিতাকে শাণিত করেছে। তাঁর কবিতায় বিষয়বস্তু নির্বাচন, কবিতায় উপমা-রূপকল্প ব্যবহার, সহজ-সরল শব্দ প্রয়োগ ও ব্যবহারে চিত্রকল্প তৈরিতে তাঁর নিজস্ব আঙ্গিক উপস্থাপনার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়।
আশ্চর্য হলেও সত্য, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পরিবর্তন ও ভাঙনের পরও তিনি মার্কস-লেনিনের চিন্তা-চেতনা ও ভাবাদর্শ সামান্য পরিমাণেও নিজেকে বিচ্যুতি ঘটাতে দেননি।
বর্তমানে পলায়নপর মনোবৃত্তির আরাধনায় সুবিধাবাদী আখাড়ার সদস্য, প্রতিষ্ঠান বিরোধীর ধূয়া তোলে প্রতিষ্ঠানের সেবাদাসে পরিণত হওয়া, একটা কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত সুশীল সমাজের পাণ্ডা শিরোমণিদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানান। বাংলাদেশের কাব্য অঙ্গনে নিজের মেধা-মনন ও পরিশীলিত প্রজ্ঞায় সমাজবাস্তবতাকে সততার সাথে শিল্পীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে পেরেছেন বলেই কবি সাথী দাশ সত্তর দশকের কবিদের মধ্যে স্বতন্ত্র সত্তা ও বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, এটা কাল উত্তীর্ণ প্রেক্ষাপটে স্বীকার্য সত্য হয়ে উঠবে-এই আশা রাখি।
....
মনিরুল মনির
সাথী দাশ :
পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রে নাম: অরুণ কান্তি দাশ।
জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৫১ সাল, চট্টগ্রাম-পটিয়া উপজেলার ধলঘাট (দাশপাড়া) গ্রাম।
তিনি ছোটবেলা থেকে পিতার চাকুরি সূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-মহকুমা-থানায় কৈশোর কাল কেটেছে। স্কুলে থাকাকালীন অর্থাৎ '৬৬-এর ৬ দফার আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির পাঠ গ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশের পর সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন, কিছুদিন পর স্বাধীনতাপন্থী (নিউক্লিয়াস) ছাত্রলীগের সদস্য পদ লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অরুণ কান্তি দাশ (সাহিত্য সম্পাদক) সম্পাদিত "অগ্নিসম্ভবা বাংলা" সংকলন প্রকাশের পর তা সরকারি আইনে বাজেয়াপ্ত বা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে সাথী দাশ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
'৬৯-'৭০ এবং উত্তাল একাত্তরের বেগবান আন্দোলন-সংগ্রামের পরিবর্তনের ধারায় তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতির তারতম্য ঘটেনি, তাই মার্চে শুরু হওয়া স্বাধীনতার আন্দোলন, প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে প্রথমে এফ এফ (এপ্রিল), পরে বি এল এফ (জুন-জুলাই)-এর উচ্চতর ট্রেনিং শেষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বি এল এফ কর্ণফুলি কন্টিনজেন্ট (Kc-1.) এর গ্রুপ সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন অপারেশনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অসংগতি, মুক্তিযুদ্ধের সুফল সমষ্টি মানুষের কাছে না পৌঁছে একটি শ্রেণি বিশেষের হাতে তুলে দেয়ার যে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র চলছে তাকে প্রতিহত না করে ঔপনিবেশিক চিন্তা- চেতনায় লালিত আমলাদের হাতে সবকিছু সঁপে দেয়ার রাজনীতি কবিকে ভীষণভাবে আঘাত করে।
তিনি দেখেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করার প্রতি অনেকের অনীহাভাব, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতিতে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভাবপ্রবণতা ও উদারতাবাদের প্রতি মনোযোগি হওয়া ইত্যাদি নানাবিদ কারণে ক্ষোভে-অভিমানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ঐসময়ে ছাত্রলীগের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর সংগঠক ও পরে মূল দলের (পাটি) সাথে সক্রিয় কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন।
১৯৮০ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল প্রকাশ্যে বিভক্তি হওয়ার পর সাথী দাশ কোনো দলের সাথেই আর সম্পৃক্ত থাকবেন না বলে পত্রিকায় বিবৃতি দেন।
সাথী দাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বি এ (সম্মান) সহ এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।
স্ত্রী দোলন চাঁপা দাশ (সেন) মাধ্যমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং অনুবাদক হিসেবে সাহিত্য অঙ্গনে সুপরিচিত। তাদের একমাত্র সন্তান অভ্র গৌরব দাশ।