বিচিত্র মানুষের মন। বিচিত্র তার খেয়াল। চিন্তা-ভাবনা। আর এইসব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের মস্তিষ্কে স্থিত কয়েক সহস্র মিলিয়ন স্নায়ুকোষ দ্বারা। এই স্নায়ুকোষগুলো মানুষের সব ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় মানুষ তার কোনো কোনো আচরণের কারণ খুঁজে পায় না। পরে অনুতাপে দগ্ধ হতে থাকে। তেমন এক ঘটনায় মধ্যবয়েসি ডা. অয়ন মিত্র, দেশের খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, স্বপ্নের জন হপকিন্সে একটা সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে এক নারীর কাজল কালো চোখের তারায়...! নাকি তার সম্মোহনী শক্তির কাছে? যখন আবিষ্কার করল এত বছর ধরে নারীদের প্রতি নির্লিপ্ত থেকে শেষে কি-না পচা শামুকে কৌমার্য হারাল, তখন অয়নের বেসামাল অবস্থা! আচ্ছা কনীনিকা কী পচা শামুক? কেন সবসময় মেয়েদের বলির পাঁঠা হতে হয়? আর কনীনিকাই বা এমন বেপরোয়া জীবনযাপন করছিল কেন? তার রাশ টেনে ধরার কেউ ছিল না? এদিকে সুস্মিতা কেন নিজেকে শামুকের মতো খোলসে গুটিয়ে রাখে? যন্ত্রের মতো কাজ করে যায়। অথচ অয়ন বাংলাদেশ থেকে এসেছে শুনে বের হয়ে পড়ল রেসিডেন্ট নার্সের আড়ালে লুকিয়ে রাখা কোমল এক মন! কেন? সুস্মিতার কী সম্পর্ক বাংলাদেশের সাথে? আর জেসমিন হক? কী তাঁর ইতিহাস? সব খুঁজে পাবেন উপন্যাসটিতে... খুঁজে পাবেন এক টুকরো ধর্ষিতা বাংলাদেশকে।
।।
অঞ্জনা দত্ত:
পেশায় চিকিৎসক নেশায় লেখক ও ভ্রমণপিয়াসী অঞ্জনা দত্তকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীভৎস স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়। তার অধ্যয়নকালীন উল্লেখযোগ্য সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটে। এই সময়ে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন। তার ভ্রমণপিপাসু স্বামী প্রদীপ কুমার দত্তের সঙ্গে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যান। সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ধ্বংসলীলার চিহ্ন দেখেছেন। 'আরিজোনা মেমোরিয়ালে' জাপানি বিমান আক্রমণের ওপর নির্মাণ করা ডকুমেন্টারি দেখেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে যে তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল সেসব দ্বীপরাষ্ট্রেও ভ্রমণ করেছেন। হো চি মিন শহরের কাছে কুচি টানেলও তার দেখার সুযোগ হয়েছিল। রুয়ান্ডা জেনোসাইডের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি রুয়ান্ডা জেনোসাইড মেমোরিয়াল পরিদর্শন করেন। জেনোসাইডে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ভ্রমণ করে তার মনে হয়েছে পৃথিবীতে যুদ্ধবাজদের চেহারা একইরকম, পৃথিবীর সর্বত্র জেনোসাইডের চিত্র একই।
যে স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশের ছাত্র যুবকদের বিশাল এক অংশের সাথে সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় অঞ্জনা দত্ত হতাশা বোধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ফসল ঠিকমতো গোলায় তুলতে না-পারায় এবং অবহেলিত চার লক্ষাধিক সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের নীরব কান্নায় তিনি যে অন্তর্জালায় জ্বলতেন তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে 'দূরের কাছের একাত্তর' উপন্যাসটিতে। একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম উপন্যাসটি পড়ে জানতে পারবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় ও বর্বর কর্মকাণ্ডের ইতিহাস এবং বুঝতে পারবে কত চড়া দামে কিনতে হয়েছিল দেশের 'স্বাধীনতা'!