মানুষের দিগ্বিজয়ের গল্প
বিষয় : প্রবন্ধ-নিবন্ধ
লেখক : ডা. মং ঊষা থোয়াই
প্রচ্ছদ : মনিরুল মনির
সংস্করণ : নভেম্বর ২০১৭
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১০০
ভাষা : বাংলা
আইএসবিএন : ৯৭৮-৯৮৪-৯২৯০১-২-৪
ডা. মং ঊষা থোয়াই :
প্রাক্তন সরকারি জেলা হাসপাতালের কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অরণ্য পাহাড়ি গ্রামীণ পরিবেশে জন্ম ১৯৫০ সালে। জন্মের মুহূর্ত থেকে সংগ্রাম করে বড় হয়ে উঠা। পড়াশোনা হাতেখড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ব্রাহ্মণ শিক্ষকের কাছে। গ্রামীণ জনপদে তখনো ভাল করে বিদ্যালয়ের স্থাপনা গড়ে উঠেনি। পরিবারে বড়দের বিদ্যার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন আসা বিদ্যালয়ের শিক্ষক হেমন্ত বাবুকে আশ্রয় দেওয়া। বিশাল যৌথ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। পরিবারে পড়াশোনা করার বয়সী ছেলেমেয়ে অনেক। কিন্তু কেউ হেমন্ত স্যারের কাছে যায় না। তিনি থাকার বিনিময়ে অন্তত ৪ বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে বসলেন আগেকার একটি বাল্যশিক্ষা বই নিয়ে। এ বয়সের শিশুরা চঞ্চল অমনযোগী দুরন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু হেমন্ত স্যারের যাকে দরকার ছিল, যেন ঠিক ঐ ছাত্রটিকে পেয়ে গেলেন। তিনি প্রথম দিন থেকে বুঝে নিয়েছিলেন শিশুটির মধ্যে কিছু একটা আছে। দু'বছর পর, বদলি হয়ে বিদায় নেওয়ার সময় শিশুটিকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করে গেলেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় জোড়াতালি দিয়ে গড়ে উঠে। মং উষা থোয়াই ডংনালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে অনেক দূরে নারাংগিরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেল বাপের অমতে। ৭ মাইল জঙ্গলি পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা। ঝড় বৃষ্টি আর তিনটি তীব্র নদীর স্রোতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করেছেন। হাজারো বাঁধা পেরিয়ে, স্কুল শেষ করে রাঙ্গামাটি কলেজে ভর্তি হলেন। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়লেন। পাকিস্তান আমলে কাফু, ১৪৪ ধারা জারি ইয়াহিয়া খানের চোখ রাঙানো শাসন উপেক্ষা করে দাপিয়ে রাজনীতি করেছেন রাঙ্গামাটি শহরে। ১৯৭২ সালে এক সময় তুখোড় ছাত্রনেতা সুনিল বাবুর অনুপ্রেরণায় কলেজ শেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা করা সুযোগ পেলেন। ক্রিমিয়ান স্টেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে বান্দরবান হাসপাতালে আবাসিক কর্মকর্তা থাকাকালীন, আবার উচ্চতর ডিগ্রি নিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের গমন করেন। বিশেষজ্ঞ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে বান্দরবান শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে বান্দরবানে তাঁর হাত ধরে ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নতি না হওয়ায় নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। গত কয়েক বছর এশিয়া ও ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করার পর যুক্তিবাদী, মুক্তচর্চা ও বিবর্তনের সাথে জড়িয়ে গেলেন। প্রবীণ লন টেনিস খেলোয়াড় ও সংগঠক। বাংলাদশের টেনিস অঙ্গনে একজন আইকন হিসেবে পরিচিত। রুটি রোজগারের কারণে পেশাগত দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিতে পারেননি। ফলে লেখালেখির দিকে মনযোগ দিতে ইচ্ছা থাকলেও হয়ে উঠেনি। সীমিতভাবে আন্তর্জাতিক সেমিনারের অংশগ্রহনের সময় এ পর্যন্ত ছোটখাটো দু'একটা তাঁর লেখা ছাপা হয়েছে। তবে বিবর্তনের উপর লেখালেখির চেষ্টা ও গবেষণা মাত্র গত দু'তিন বছর থেকে।