বিদেশী বিভাষীদের দ্বারা বাংলা ভাষাতত্ত্বে তত্ত্বীয় চর্চা শুরু হয়। এর পর থেকেই বাংলা গদ্যেরও বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজদের আগমনের পূর্বে আমাদের এদেশীয় মানুষেরা কবিতার ভাষাতেই তাদের বৈষয়িক কাজ-কর্ম চালিয়ে নিতেন। কাজের এবং জীবনাচারের অপরিহার্য যে ভাষা গদ্য তার ব্যবহার ও উন্নয়ন, একথা অনস্বীকার্য যে, বিদেশীদের হস্তাবলেপের পরেই ঘটে। ইংরেজ-পর্তুগীজরা এসেছিল ধর্মীয় ও বৈষয়িক স্বার্থসিদ্ধির প্রত্যাশায় এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্যেই তারা এদেশীয় ভাষা উন্নয়নে সচেষ্ট হন।
এই গ্রন্থে অনুপুঙ্খ পর্যায়ে পৌঁছার পূর্বে একথা বলা যায় যে, -প্রাচীন ভারতীয় ভাষাতাত্ত্বিক চর্চার ঐতিহ্যের ধারা এবং আধুনিক ইউরোপীয় ধারা— এই দু'য়ের সম্মিলনেই ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর বাংলা ভাষাতত্ত্ব চর্চার নিদর্শনগুলো" সৃষ্টি হয়েছিলো। এবং স্বভাবতই বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য-ধারা এবং ইউরোপীয় (আধুনিক) ধারার টানাপড়েনে বাংলা ভাষাতত্ত্ব চর্চা বিক্ষেপিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই গ্রন্থের পর্যালোচনায় ভাষাবিজ্ঞানের কৌশলগত বিধা (Technical aspects) ধরে বিচার করা হয়নি। বাংলা ভাষায় ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে বিশুদ্ধ ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচ্য সময়ের চর্চার সমীক্ষণ লেখক করেননি; যে জন্য ভাষাচার্য ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ মনীষীদের উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্মের পরিবীক্ষণ এখানে থাকছে না।
আলোচ্য গবেষণা-জিজ্ঞাসা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করবে বাংলা ভাষার তত্ত্বগত চর্চার সূচনা, বিস্তরণ, সাফল্য এবং ভাষার অবয়ব, শৃঙ্খলা ও ব্যবহার পারঙ্গমতার স্বরূপ—যা নির্বাচিত শিরোনামেই স্ব-ব্যাখ্যাত।
.
মহাম্মদ দানীউল হক
উত্তরা, ঢাকা
..
মোস্তফা মোহাম্মদ (ড. মো. গোলাম মোস্তফা) বগুড়া জেলার শেরপুর থানার ফুলবাড়ি গ্রামে এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান FIITS FOUNDATION-এর চেয়ারম্যান। বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-কবিতা বিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দশটি।
“আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাসাহিত্যে জীবন ও সমাজ' এবং ‘আবুল হাসান : উন্মোচিত অন্তর্লোক' তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। সম্পাদনা করেন ‘কাৎলাহার’ সাহিত্যপত্র।