মরমি ভাবনার প্রথম অধ্যয়ন হচ্ছে হৃদয় নিংড়ে সাধনার প্রাণ প্রকাশ করা। সেই প্রাণ- আলোকরেখার বিন্দু বিন্দু ছড়িয়ে পড়ার সুখ শুধু মনতরী বেয়ে যাওয়া। মুহাম্মদ তোফায়েল হায়দার তেমনি মরমের কথা ও ভাব প্রকাশ করেছেন আলোচ্য বইয়ের গদ্যে। এই মরমি ভাবনার প্রবন্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ-শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিই হয়ে গেছে প্রবন্ধ-গবেষণার সারবত্তা।
পাঠক এই বইয়ে পেয়ে যাবেন কিছু ঐতিহ্য-স্মৃতি- ইতিহাস-রাজনীতি-সময়ের অভিজ্ঞান। মুক্তিযুদ্ধের দুটো দিক- সম্মুখে থেকে লড়াই ও পরোক্ষ টানে লড়াই। সব লড়াই মনের। পরিপার্শ্ব থেকে এই লড়াই নিয়ে পরিসংখ্যানমূলক প্রবন্ধ ব্যতিক্রম হয়ে ওঠেছে। চট্টগ্রাম তথা রাউজান এলাকার মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। এছাড়াও লেখকের মানসভ্রমণ কিংবা চিন্তা বিস্তারের কিছু গদ্যরেখা চমৎকার হয়ে দিনমান গড়িয়ে গেছে। ভালো সময় কাটবে পাঠের তেপান্তরে।
.
মনিরুল মনির
.
.
মুহাম্মদ তোফায়েল হায়দার
ব্যাংকার, সমাজকর্মী ও গবেষক
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯ সনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গৌড়ের সুলতান সৈয়দ নশরত শাহের প্রপৌত্র সৈয়দ জহীরুদ্দিন কাজী (দিল্লীর মুসলিম শাসক কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত বিচারক) এর অধঃস্তন পুরুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সমাপনান্তে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা ও পরে ব্যাংকিং পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে চাকুরীকালীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে যোগদান করেন। তিনি বিআইবিএম থেকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এন্ড ফরেন এক্সচেঞ্জ, ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট, আইসিসি ওয়ার্কশপ অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ডকুমেন্ট ডিসক্রিপেনসিস এন্ড ডিসপিউটস, BASEL II নিউ কেপিট্যাল এডিকুয়েসি প্রপোজালস সহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের জন্য তিনি ২০০৭ সালে এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন।
তিনি ইউসিবিএল বরিশাল শাখা, দিলকুশা শাখা ও বনশ্রী শাখায় হেড অব ব্রাঞ্চ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া বিপিপ্যাল ব্রাহ্ম, করেন এক্সচেঞ্জ ব্রাহ্ম সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় হেড অব ফরেন এক্সচেঞ্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি প্রধান কার্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন, ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন সহ কয়েকটি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি অবসর নেন। ২০০৪ সালে তোফায়েল হায়দার করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেমিনারে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে 'ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং' সংক্রান্ত সেমিনারে কুংমিন, চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২০১০ সালে, ২০১৬ সাল ও ২০১৮ সালে হজ্ব ও উমরাহ পালনার্থে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় গমন করেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতি তিনি প্রবল অনুরাগী। তিনি রাউজান থানা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের ডিপার্টমেন্টাল সেক্রেটারির দায়িত্বসহ যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এছাড়াও তিনি রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র সংসদ, চলচ্চিত্র কেন্দ্র, চট্টগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, চট্টগ্রাম পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকাস্থ ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য এবং চট্টগ্রাম সমিতি ও রাউজান সমিতির জীবন সদস্য।
পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি (বি.এ.টি) তে চাকুরিরত। মেয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। শিশুকাল থেকেই তোফায়েল হায়দার আগামীদের আসরের মাধ্যমে লিখালিখিতে হাতেখড়ি প্রাপ্ত হন। দৈনিক আজাদী ও নয়া বাংলায় ওনার বেশকিছু কবিতা, নিবন্ধ ও প্রকাশিত হয়। তিনি বেশকিছু সাহিত্য সাময়িকী ও স্যুভেনির ও সম্পাদনা করেন। অবসরকালীন সময়ে তিনি সমাজসেবা, পড়াশোনা ও গবেষণায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন।